অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কুমিল্লার জেলার বুড়িচংয়ের জঙ্গলপুর। জঙ্গলপুরের জঙ্গলে ক্ষেতের আইলে সারি সারি খেজুর গাছ পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সেই খেজুর গাছ থেকে রস নিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন ওই গ্রামের আরিফুর রহমান নামে এক যুবক। মাত্র আট হাজার টাকা পুঁজিতে দিনে ১০ হাজার টাকার বেশি আয় করছেন তিনি।
জানা যায়, আরিফুরের বাবা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শীত মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহ করতেন তিনি। আরিফুর তিন বছর আগে দুবাই থেকে বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে আসার পর দেখেন অনেকগুলো খেজুর গাছ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। আরিফুর ভাবলেন তার বাবা এক সময় গাছ ছিলে খেজুরের রস সরবরাহের কাজ করতেন। ওই কাজে সহায়তা করতেন তিনি। তাই পরিত্যক্ত গাছগুলো থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। তার নিজের ছিল ১৩টি গাছ। সঙ্গে আরও ৪০টি গাছ আট হাজার টাকায় প্রতিবছরের জন্য লিজ নেন। একজন সহযোগীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। বর্তমানে দিনে গড়ে প্রতি গাছ থেকে পাঁচ লিটার রস পান তিনি। প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৮০ টাকা দরে। দিনে সরবরাহকৃত সব রসই বিক্রি হয়ে যায় তার। তার কাছ থেকে বেশি রস নিতে হলে অগ্রিম অর্ডার দিতে হয়।
আরিফুর রহমান বাসসকে বলেন, এ কাজে খাটুনি একটু বেশি। তাই গাছগুলো থেকে পালা করে দুইভাগে রস সংগ্রহ করি। একদিন ২৬টি গাছের রস সংগ্রহ করলে আরেকদিন ২৭টি গাছের রস সংগ্রহ করি। অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসে এ কাজ করি। গড়ে প্রতি গাছ থেকে পাঁচ লিটার রস সংগ্রহ হয়। তিন মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করতে পারি।
আরিফুর আরও বলেন, তিন বছর আগে দুবাই থেকে ফিরে যখন রস সংগ্রহের কাজ শুরু করি, তখন অনেকে আমাকে পাগল বলতো। অনেকে বলতো, এত রস বিক্রি করার কাস্টমার পাবো কই! কিন্তু এখন আর কেউ এ কথা বলে না। বরং খেজুরের রসের এতই চাহিদা যে অগ্রিম অর্ডার করতে হয়।
জঙ্গলবাড়ির এলাকার স্কুল শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, সন্ধ্যায় ছুটে গেছি জঙ্গল বাড়িতে আরিফ নিজেই গাছ থেকে রস নামিয়েছেন। আধা কেজি পান করেছি। বাসার জন্য আরো দুই কেজি নিয়েছি। তরতাজা রসের স্বাদই আলাদা।
একটি বেসরকারী ফার্মে আছেন রাজিব আহমেদ সুজন। কাঁচা রস খেয়েছেন। বাড়ির জন্য খেজুর রস জাল দিয়ে তৈরি গুড় কিনেছেন এককেজি। রাজিব বলেন, প্রকৃতি থেকে পাওয়া খাবার উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এক সময় খেজুর রস বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি হলেও কালক্রমে তা কমে আসছে। এতাজা রসের স্বাদ নিতে বাড়ি থেকে ৮ কিঃমিঃ দূরে চলে এসেছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মিজানুর রহমান বাসসকে বলেন, খেজুরের রস বেশ উপকারী আবার খেজুরের গাছ জ্বালানি হিসেবেও খুব ভালো। এ রস জ্বাল দিয়েও খাওয়া যায়। বিভিন্ন রকমের, ফিরনি, পায়েশ তৈরি করা যায়। এ রস দিয়ে গুড় বানানো হয়। আরিফুল অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ ছেলে। সে পরিত্যক্ত গাছকে কাজে লাগিয়ে উপার্জন করছে। কুমিল্লার অনেক মানুষ আছে, যারা গত পাঁচ বছর খেজুরের রস চোখেও দেখেনি, তারা এখন সুযোগ নিচ্ছেন। গাছির অভাবে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুরের রস। এসময়ে ৫২টি গাছ থেকে সে রস (আরিফুর) সংগ্রহ করছে, তা সত্যিই আশাব্যঞ্জক।
Leave a Reply